বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:৫৮ অপরাহ্ন

সুন্দরগঞ্জে বালু চরে পড়ে নষ্ট হচ্ছে নৌকাঃ বিপাকে জেলেরা

সুন্দরগঞ্জে বালু চরে পড়ে নষ্ট হচ্ছে নৌকাঃ বিপাকে জেলেরা

সুন্দরগঞ্জ প্রতিনিধিঃ ভরা তিস্তা এখন মরা। এক সময়ের খর¯্রােতী রাক্ষুসি তিস্তা নদী এখন ধূ-ধূ বালু চরে রুপ নিয়েছে। সেই বালু চরে এবং শাখা নালা গুলোয় পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে জেলেদের নৌকা। শাখা নদগুলোতে নেইপানি, বিপাকে জেলে ও নৌ-শ্রমিকরা। তিস্তার চরে এখন নানান ফসলের আবাদ।
হরিপুর চরের নৌ-শ্রমিক ছাত্তার মিয়ার ভাষ্য, আজ থেকে ১১ বছর আগে তার পাঁচটি নৌকা ছিল। নৌকার ব্যবসা দিয়ে সে সংসার চালাত। বালু চরে পড়ে থেকে তার চারটি নৌকা নষ্ট হয়ে গেছে। এখন তার মাত্র একটি নৌকা। সেটিও বছরের ৩ মাস মুল নদীতে চলাচল করে। উজানের পলি জমে নদী ভরে উঠায় এখন আর নৌকা চলেনা। সে কারনে মাঝি মাল্লারা অন্য পেশায় জড়িয়ে পড়ছে। নদী খনন বা ড্রেজিং করলে হয়তো তিস্তা তার গতিপথ ফিরে পাবে। বর্তমান বাজারে একটি নতুন নৌকা তৈরি করতে প্রায় ২ লাখ টাকা লাগবে। সেটি চরের জেলেদের পক্ষে এখন অসম্ভব।
উপজেলা পরিষদের সদ্য সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান জয়ন্ত দাসের ভাষ্য, উজানের ঢলে ভরে উঠেছে তিস্তা নদী। নদীতে এখন আরজল থাকেনা। নদীতে নৌকা দিয়ে মাছ ধরার আর কোন সুযোগ নেই। এক যুগ ধরে জেলেরা তিস্তা নদীতে মাছ ধরতে পারেনা। সে কারনে অনেকে রিক্সা, ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাচ্ছে। বালুচরে পড়ে থেকে দিনের পর দিন নষ্ট হয়ে যাচ্ছে জেলেদের নৌকাগুলো।
সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তারাপুর, বেলকা, হরিপুর, শান্তিরাম, কঞ্চিবাড়ি, চন্ডিপুর, শ্রীপুর ও কাপাসিয়া ইউনিয়নের উপর দিয়ে প্রবাহিত তিস্তানদী। তিস্তা তার গতিপথ পরিবর্তন করে অসংখ্য শাখা নদেরুপ নিয়েছে। বছরে মাত্র ৬ মাস মুলনদীতে নৌকা চলাচল করে। গোটা বছর পায়ে হেঁেট পারাপার করতে হয় চরবাসিকে।
এক সময় উপজেলার পাঁচপীর, বেলকা, মীরগঞ্জ ও তারাপুর খেয়াঘাট হতে পীরগাছা, কাউনিয়া, উলিপুর, কুড়িগ্রাম, কাশিম বাজার, চিলমারি, রৌমারি, মোল্লার চর, ভূরুঙ্গামারি, দেওয়ানগঞ্জ, কামারজানি, গাইবান্ধা, সাঘাটা, ফুলছড়ি, জামালপুর, নারায়নগঞ্জ, বালাশিঘাট, ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ রুটে নৌ-চলাচল করত বলেন হরিপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মোঃ মোজাহারুল ইসলাম। তাঁর ভাষ্য পানি না থাকায় সব রুটে নৌ-চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। তিস্তায় হাজারও নৌ-শ্রমিক ও জেলে সম্প্রদায় নৌকা চালিয়ে এবং মাছ ধরে সংসার চালাত। সেই সব জেলে ও নৌ-শ্রমিকরা এখন বেকার হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। অনেকে বাপ দাদার পেশা পরিবর্তন করে অন্য পেশা জড়িয়ে পড়েছে। সেই সাথে বালুচরে পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে নৌকা।
বাদামের চরের ব্যবসায়ী ফরমান আলীর ভাষ্য, জেলা ও উপজেলা শহর হতে কাপাসিয়া ইউনিয়নের বাদামের চরের দূরত্ব প্রায় ৩৫ কিলোমিটার। নৌ-চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন বিভিন্ন যানবাহনে জেলা ও উপজেলা শহর হতে মালামাল নিয়ে এসব ব্যবসা করা অত্যন্ত কষ্টকর হয়ে পড়েছে। ঘোড়ার গাড়ি ও পায়ে হাঁটা ছাড়া অন্য কোন উপায়ে চরের মধ্যে চলাচলের কোন মাধ্যম নেই। আজ থেকে ১৫ বছর আগে নৌ-রুটে মালামাল আনা নেয়া করা হত। নদী ভরে উঠায় জেলে ও মাঝি মাল্লাদের নৌকাগুলো এখন বালুচরে পড়ে নষ্ট হচ্ছে।
গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিবার্হী প্রকৌশলী মোঃ হাফিজুল হক জানান, নদী ড্রেজিং, খনন ও নদীর গতিপথ পরিবর্তন করা সরকারের উপর মহলের সিদ্ধানের ব্যাপার। তবে নদী ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করছে।

 

নিউজটি শেয়ান করুন

© All Rights Reserved © 2019
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com